মসজিদ থেকে গীর্জা: দ্য মস্ক ক্যাথিড্রাল অব কর্ডোভা

এক লক্ষ দশ হাজার চারশত স্কয়ার ফিট আয়তনের মসজিদটির নকশা করেন একজন সিরীয়ান স্থপতি। এর থামের সংখ্যা ৮৫৬ টি, ৯ টি বাহির দরজা ও ১১ টি অভ্যন্তরীণ দরজা রয়েছে । লাল ডোরাকাটা খিলানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় স্থাপত্যশিল্পে মুসলিম পান্ডিত্যের কথা।
হৃদয় গ্রাহী নকশা ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য নবম ও দশম শতাব্দী তে এটি ছিল সারা বিশ্বের প্রথম সারির মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম ।
কিন্ত মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আন্দালুসিয়া কে বিভক্ত করে ফেলে । মুসলমান দের এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্যাসলের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা ১২৩৬ সালে স্পেন দখল করলে এই মসজিদ কে গির্জায় পরিণত করা হয় । তখন থেকে একে বলা হয় দ্য মস্ক ক্যাথেড্রাল অব কর্ডোভা ।
এক সময় সুন্দর সেই মিনার থেকে ভেসে আসত আযানের ধ্বনি । কিন্ত গীর্জায় রুপান্তরিত হওয়ার পর মিনারটিতে অসংখ্য ঘন্টা লাগানো হয়েছে ।

বেশ কয়েক জায়গায় আলাদা করে গির্জার মঞ্চ ও পুণ্যার্থীদের বসার বেঞ্চ রয়েছে । মঞ্চে শোভিত হচ্ছে যিশুখ্রিস্ট ও সাধুদের ভাস্কর্য ।

মসজিদে জুতা পরিহিত অবস্থায় প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং সেখানে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ ।
অসাধারণ নৈপুন্যে তৈরি এই মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মহাকবি আল্লামা ইকবাল রচনা করেছিলেন ৭ টি কবিতা । ১৯৩৩ সালে স্পেন সফরকালে আল্লামা ইকবাল এই মসজিদ পরিদর্শন করেন ৷ মসজিদে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শুধু আল্লামা ইকবালকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় ৷ মসজিদে ঢুকেই তিনি আযান দেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন ।

Photo Source: Dawn.com
সেই নামাজে অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি যে মোনাজাত করেছিলেন তা দুয়ায়ে বালে জিবরীল(Bal e Jibreel) নামে পরিচিত । প্রায় সাতশত বছর পর প্রথম মুসলমান হিসেবে তিনিই এই মসজিদে নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য অর্জন করেন । ২০০০ সালের প্রথম দিকে স্প্যানিশ মুসলমানরা এই মসজিদের নামাজ আদায় করার দাবি জানালে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন এই কর্ডোভা মসজিদটি এখনো গীর্জা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে । ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো এ মসজিদটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত দেয় ।